◾হিন্দুত্ববাদই কি মোদির প্রধান শত্রু হবে?

 গৌতম দাস এর #কলাম

◾হিন্দুত্ববাদই কি মোদির প্রধান শত্রু হবে?
আমেরিকা এ বছরই আগামী নাইন-ইলেভেন মানে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও জানিয়েছে এবং সে মোতাবেক সিরিয়াস প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কেউ মানতে চায়নি, কে আর মানতে চায় সাজানো বাগান ফেলে একদিন চলে যেতে হবে? না, দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছি না। বলছি, এত দিন মানে গত ৭৫ বছরের দুনিয়া বলতে যেটা ছিল আমেরিকান ইচ্ছায় সাজানো একটা দুনিয়া, আমেরিকান গ্লোবাল নেতৃত্বের সেই দুনিয়া, তার কথাই বলছি। এরই অবসান হতে চলেছে।
আর আপনি সেই সাজানো আমেরিকান দুনিয়াতেই থাকতে বাধ্য ছিলেন। আবার বিপরীতে যারা ছিল সেই আমেরিকার সভাসদ মানে আমেরিকার শাসন-সভায় একটা আসন পাওয়া দেশ যেমন ধরুন ভারত- তাহলে সেই ভারত কেন বিশ্বাস করতে চাইবে যে, আমেরিকার সাজানো দুনিয়া, ভারতের প্রিয় সেই দুনিয়াটা ক্রমেই শেষ হতে যাচ্ছে, একদিন আর থাকবে না!
কিন্তু বাস্তবতা হলো, সেটিই ঘটতে এবার নড়েচড়ে উঠেছে। এর যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে সম্ভবত আফগানিস্তান থেকে। কলকাতার ভাষাতেই যদি বলি ‘আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সব গুটিয়ে ছেড়ে যাওয়া নিয়ে ভারতের কপালে এবার বড় ভাঁজ পড়েছে।’ কেন? ভাঁজ পড়ার কী আছে?
দাবুদ মোরাদিয়ান (Davood Moradian) একজন তাজিক বংশোদ্ভূত আফগান ও হেরাত প্রদেশের বাসিন্দা। তার নাম বাংলায় ঠিকমতো উচ্চারণ করলাম কি না জানি না। কারণ এটা আফগান এবং বিশেষ এথনিক নাম।
তাই আগেই মাফ চেয়ে রাখলাম। একাডেমিকভাবে তিনি ইউকে মানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি। কাজ হিসেবে তিনি বর্তমান কাবুল সরকারের পররাষ্ট্র বিভাগের পরামর্শদাতা ও এক থিংকট্যাংকের আফগান শাখার ডিরেক্টর। তিনি সম্প্রতি এক প্রবন্ধ লিখেছেন, যা ছাপা হয়েছে ভারতের দ্য প্রিন্ট পত্রিকায়।
শিরোনাম বাংলায় বললে হয়, ‘আফগানিস্তানের সাথে জড়িয়ে থাকবে কি থাকবে না তা ভারতের জন্য কোনো সহজ প্রশ্ন নয়’। কিন্তু এর চেয়ে বড় কথা, তার লেখার একটি বাক্য আবার এ রকম- ‘আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে পালিয়ে যাওয়া নয়াদিল্লির জন্য একটা পলিসি অপশন তো বটেই; ঠিক যেমন ১৯৬২ সালের মতো, চীনের সাথে যুদ্ধের পরে ভারত তিব্বতের লাসায় থাকা ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল অফিস গুটিয়ে নিয়েছিল। ভারত অবশ্য ইতোমধ্যে হেরাত ও জালালাবাদে ভারতের দুই আফগান কনসুলেট অফিস গুটিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু মজার কথা হলো, দ্য প্রিন্ট পত্রিকা লেখার সারাংশ হিসেবে এই প্রথম বাক্যটা- আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে চলে যাওয়া নয়াদিল্লির জন্য একটা পলিসি অপশন তো বটেই; ঠিক যেমন ১৯৬২ সালের মতো- এতটুকুই তুলে নিয়ে সেঁটে দিয়ে রেখেছে।
আমেরিকায় নাইন-ইলেভেন হামলার এক মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়ে দখল নিয়েছিলেন। সে সময়ই আমেরিকার বিদগ্ধজন আপত্তি তুলে বলেছিলেন, এটা অপ্রয়োজনীয় ও বাড়াবাড়ি। মশা মারতে কেউ কামান বের করলে তার উদ্দেশ্য খারাপ বলতেই হয়।
কিন্তু আফগানিস্তানে সামরিক হামলা করে ফেলার পরে আমেরিকার জন্য এই হামলার পক্ষে বিশ্ব-জনমত জড়ো করা আর এই হামলাকে সমর্থক রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়ানোর ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ ছিল না। গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসিতে ভিন্ন কিছু করার আর সুযোগ ছিল না।
সেই সূত্রে এশিয়ায় এক বড় জনসংখ্যার রাষ্ট্র ভারতের সমর্থন আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এখান থেকে ভারত নিজেকে এক ভিক্টিম বা ক্ষতিগ্রস্ত পার্টি হিসেবে সাজিয়ে আমেরিকার কাছ থেকে সহানুভূতি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
আর এখান থেকেই কথিত জঙ্গিবাদ বা টেররিজমের ব্যাখ্যা ও যুদ্ধ প্রসঙ্গে ভারত-আমেরিকার এক ‘আনহোলি অ্যালায়েন্সের’ যাত্রা শুরু হয়েছিল যা এখন থেকে ক্রমেই অন্তত ভারতের বিরুদ্ধে তো যাবেই মনে হচ্ছে!
এতে ভারতের দিক থেকে ‘সবচেয়ে বড় মিথ্যা’ ফলে বড় দুর্বলতা ছিল, কংগ্রেসের ১৯৮৭ সালের ভারতীয় কাশ্মিরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি। এই ব্যাপক কারচুপি থেকেই কাশ্মিরের রাজনীতি এরপর সশস্ত্র পথে রওনা দিয়েছিল বলে অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত আছে।
এমনকি এ প্রসঙ্গে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গবেষণায় প্রাপ্ত অনেক রিপোর্টও পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়, “কোনো দেশের জনপ্রতিনিধিত্ব বা প্রতিনিধি নেতা নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার বিপদ কী, কেন এ কাজ করলে এরপর পরিস্থিতি সশস্ত্র রাজনীতির পথে চলে যায় এর ‘ক্লাসিক উদাহরণ হলো’ ১৯৮৭ সালের ২৩ মার্চের কাশ্মিরের নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি।
অর্থাৎ পাবলিককে তার কথা বলা বা তার মতামত প্রকাশের পথ বন্ধ করে দিলে, প্রকাশিত হতে না দিলে, নির্বাচিত হতে না দিলে- এর পরে একে সশস্ত্র পথে যেতে আহ্বান রাখলে সে সহজেই সে পথ সমর্থন করে এগোবেই।
কাশ্মির প্রসঙ্গে নেহরুর অপরাধের শেষ নেই। প্রধানতম অপরাধ, তিনি জাতিসঙ্ঘের রিকমেন্ডেশনে গণভোটের পথে যাননি। তবু চক্ষুলজ্জায় তিনি ভারতের কনস্টিটিউশনে ৩৭০ ধারা যুক্ত করে কাশ্মিরকে ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদার রাজ্য’ হিসেবে ভারতের মধ্যে যুক্ত করে নেয়াটাকে জাস্টিফাই করতে চেয়েছিলেন; যদিও সেসব বিশেষ মর্যাদা কিছুদিন পরপর খুলে নেয়া হয়েছিল।
তবু রাজ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাটা কোনোমতে টিকে ছিল। আর সেটিই ১৯৮৭ সালে শেষ করে দেয়াতেই কাশ্মির সশস্ত্র পথে চলে যায়। সরকারি হিসাবে কাশ্মিরের সশস্ত্র পথে যাত্রা জুলাই ১৯৮৮ সাল থেকে বলা হয়ে থাকে।
ভারতের ক্যারাভান ম্যাগাজিনকে ধরা হয় হাতেগোনা ‘নিরপেক্ষ ও পেশাদার জার্নালিজমের অন্যতম উদ্যোগ’ হিসেবে। গত ২০১৬ সালের তাদের প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই প্রসঙ্গগুলোই বিস্তারে তুলে এনে এক রিপোর্ট করা হয়েছিল। খুবই সংক্ষেপে বললে পেছনের সেই কাহিনী হলো- রাজীব গান্ধী ও ফারুক আবদুল্লাহর মধ্যে নাকি বন্ধুত্ব খুবই মারাত্মক সলিড ছিল।
বাস্তবত ফারুক আবদুল্লাহর বাবা শেখ আবদুল্লাহ ছিলেন মূলত নেহরুর এক কাশ্মিরি প্রডাক্ট বলা যায়। কংগ্রেসের ‘নেহরুর কাশ্মিরি ভার্সন’। যে কাজ নেহরু নিজে করতে পারতেন না সেটি তিনি অনায়াসেই শেখ আবদুল্লাহকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারতেন, এতটাই অনুগত ছিলেন শেখ আবদুল্লাহ। আসলে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং ও তার প্রশাসনিক চিফ সেক্রেটারিকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে নেহরুর হাতিয়ার হয়ে থাকতেন এই ফারুক আবদুল্লাহ।
ফলে রাজীব গান্ধী ও ফারুক আবদুল্লাহর মধ্যকার ‘সলিড বন্ধুত্ব’ বুঝতে আমাদের কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু কত দূর এর সীমা? নির্বাচনে জবরদস্তি করে বন্ধুকেই জিতিয়ে এনে দেখাতেই হবে? বন্ধুত্ব কত গভীর? এত দূর?
‘ক্যারাভান’ বলছে ওই বন্ধুত্বের মাঝেই বাধা হয়ে এসে গিয়েছিলেন আরেক নেতা মুফতি সাঈদ যিনি আসলে ভারতীয় কাশ্মিরের কয়েকটা ইসলামী দলের অ্যালায়েন্সে গড়া এক দলের মূল নেতা, যে দলের নাম মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট। কারণ তিনি জিতে যাচ্ছিলেন ওই নির্বাচনে।
বর্তমান লেখার প্রসঙ্গ তো আফগানিস্তান সেখানে কাশ্মির প্রসঙ্গ এলো কোথা থেকে? উপরে কথা বলছিলাম ভারতের নিজেকে এক ভিক্টিম বা ক্ষতিগ্রস্ত পার্টি হিসেবে সাজিয়ে বুশের ওয়ার অন টেররের প্রোগ্রামে ঢুকে পড়া আর সহানুভূতি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথা।
১৯৮৭ সালের ওই নির্বাচনী কারচুপি যা থেকে পরে ১৯৮৮ সাল থেকে ভারতীয় কাশ্মিরের রাজনীতি সশস্ত্র পথে যাত্রা করেছিল, কংগ্রেস ও পরে বাজপেয়ীর বিজেপি নির্বাচনী কারচুপির ঘটনা লুকিয়ে এটাকেই কাশ্মিরের সশস্ত্রতা ‘সীমা পারকে আতঙ্কবাদ’ বলে পাল্টা মিথ্যা বয়ান খাড়া করেছিল; যাতে অর্থ হয়ে যায়, সীমা পার মানে পাকিস্তান থেকে বা পাকিস্তানি কাশ্মির থেকে আতঙ্কবাদ বা জঙ্গিদের আসার কারণেই ভারতের কাশ্মিরের সমস্যা শুরু হয়েছে।
আর সর্বশেষে আফগানিস্তানে বুশের দখলি হামলার পরে বুশ-বাজপেয়ী একমত হয়ে যান যে, তারা ‘একই সন্ত্রাসবাদের’ শিকার হয়েছেন। আসলে ভারত নাকি আগে থেকেই ইসলামী জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের শিকার (নির্বাচনী কারচুপি নয়)- এ কথাটি বুশের আমেরিকা স্বীকার করে নেয়ার বিনিময়েই ভারত স্বীকৃতি দিয়েছিল যে, আমেরিকাও ‘একই সন্ত্রাসবাদের’ শিকার। অতএব ওয়ার অন টেরর-ই সবার উপরের সত্য এবং ভারত-আমেরিকা তাই দু’জনে দু’জনার। আর সেই থেকে উল্টা আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারতও বিরাট এক আমেরিকান পার্টনার হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
আবার আমেরিকার আফগানিস্তানে বোমা ফেলতে, হামলা চালাতে গেলে পাশের দেশে একটা সামরিক ঘাঁটি দরকার হয় তাই এ থেকে লঞ্চিং প্যাড হিসেবে পাকিস্তানকেই আমেরিকার দরকার। অতএব এই যুদ্ধে আমেরিকার পক্ষে পাকিস্তানকে শামিল থাকতেই বাধ্য করা হয়েছিল।
নইলে পাকিস্তানকেই আমেরিকার বোমা হামলা খেয়ে পুরান প্রস্তর যুগে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে আমেরিকান উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে ফোনে হুমকি দিয়ে রাজি করিয়েছিলেন। সে কথা মোশাররফ ‘লাইন অন ফায়ার’ বইয়ে উল্লেখ করে রেখেছেন। আর এখান থেকেই আমেরিকা সবসময় উল্টা ভারতকে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলিয়ে গেছে যে, খোদ পাকিস্তানই এক সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র। অর্থাৎ ভারতকে আমেরিকা ব্যবহার করেছে পাকিস্তানের উপর চাপ রাখতে।
দিন সবারই একদিন আসে! তাহলে এটা কি সেই বিশেষ মুহূর্ত? দিন বদলানোর দিন? দিন সবারই একদিন আসে! সেরকম? কেন এমন বলছি?
সর্বশেষ এক্সিও ম্যাগাজিনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাক্ষাৎকার (যেটা বহুল প্রচার করা হয়েছে বাংলায়; প্রথম আলোতে অনুবাদও হয়েছে) এর কথা ধরি তবে, ইমরানই আমেরিকার শেষ ভরসা- এই মনে করে বাইডেন প্রশাসন তাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে।
কিন্তু ইমরান ততই শক্ত করে বলছেন, পাকিস্তানে আমেরিকার কোনো ঘাঁটি করতে তিনি দেবেন না। ওদিকে তালেবানেরাও আমেরিকার সবচেয়ে ছোট কোনো সামরিক স্থাপনাও আগেই নাকচ করে দিয়েছে। এর সোজা অর্থ আমেরিকা তাহলে কোথায় যাবে? তাহলে আলকায়েদা বা অন্যান্য ছোট বা বড় সশস্ত্র গ্রুপ যারা এত দিন আমেরিকান বোমা খেয়েও চুপ ছিল, চেপে থাকা এদের সাথে আমেরিকার যে সম্পর্ক ও ক্ষমতার ভারসাম্য এত দিন ছিল, এর কী হবে? সেটি তো আর আগের ভারসাম্যে থাকবে না। সব ঢলে পড়তে বাধ্য!
বাস্তবতা হলো, আমেরিকার সাথে আর কেউ নতুন করে গাঁটছড়া বাঁধা দূরে থাক কোনো সম্পর্কই রাখতে চাইছে না। এটাই প্রমাণ করে, আমেরিকার গ্লোবাল নেতা বা পরাশক্তি থাকার দিন আজ কোথায় ঠেকেছে। অতএব এই আমেরিকার আড়ালে থেকে যে ভারত আমেরিকাকে সার্ভিস দিয়ে গত ২০ বছর মাখন খেয়ে গেছে, এর এখন কী হবে?
এ অবস্থায়, আফগান ইস্যুতে ভারত-আমেরিকার অবস্থান এখন যার যার নিজেকে বাঁচাও, নিজে বাঁচলে বাপের নাম! খুব সম্ভবত, আমেরিকার সাথে থাকলেই হয়তো ভারতের বিপদ বেশি বলে ভারতের রিডিং। দিন এখন ভারতের পক্ষে আর নয়!
আবার তাহলে ভারত কি এখন একেবারেই সবদিক থেকে হাত গুটিয়ে নেবে, এই ইস্যুতে অন্তত আমেরিকা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে? সেটি ভারত বাস্তবায়ন করতে পারলে হয়তো এখন বেঁচেই যেত! এ কথার মানে কী? এর বাস্তবায়নও ভারতের হাতে আর নেই, তাই কী? হ্যাঁ, ঠিক তাই। কেন?
ভারতের মানে, সুনির্দিষ্ট করে এটা মোদির জন্য একেবারে বিজেপি-আরএসএস গোষ্ঠী ও তার হিন্দুত্ববাদের পাপ। তার ৫ আগস্ট ২০১৯ সালের ওই ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মিরকে একেবারে গায়ের জোরের ভিত্তিতে মানে ‘আইনগতভাবে দখলদার’ হিসেবে পুরো কাশ্মিরই দখল করে ফেলেছিল।
কারণ ওই দিন ভারতীয় সংসদে অমিত শাহ পাকিস্তান ও চীনের কাশ্মির অংশও ভারতের বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদের প্রবল জোশে। কাশ্মির আর ভারতের কোনো রাজ্যের মর্যাদাতেও নেই বলে ঘোষিত হয়ে আছে সেই থেকে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদির কানে এখন পানি ঢুকেছে মনে হচ্ছে! তিনি টের পেয়েছেন আফগানিস্তান দখলের আগামী ২০তম বার্ষিকীতে আমেরিকা আফগান ছেড়ে একেবারে চলে গেলে, এর পরে সংশ্লিষ্ট যেসব গোপন ও সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতার সম্ভাবনা, এদের বিরুদ্ধে ভারত একেবারেই ডিফেন্সলেস। এটা আবার ভারতীয় কাশ্মিরকে বড় সশস্ত্রতার পথে যেতে উসকে তুলতে পারে। মূল কারণ গত দুই বছরের মোদি সরকারের সাপ্রেশন!
তাহলে ভারতের দিক থেকে দাঁড়াল, এক দিকে সেই আমেরিকার আর মুরোদ নেই, আবার মোদি ইমরানের পাকিস্তানের সাথেও এত দিন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে, উল্টা বোমা হামলার নাটক করেছে চরমে। সরাসরি প্রচার করেছে ‘পাকিস্তান ঘৃণা’।
ইমরানের পাকিস্তানের সাথে ন্যূনতম আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক করতে বা দেখাতে চায়নি। কারণ চরম মুসলমান বিরোধী ঘৃণা জাগানো- এটাই তো মোদির জন্য ভোটে হিন্দু ভোট মেরুকরণের একমাত্র কৌশল। কাজেই পাকিস্তানের সাহায্য চেয়ে একবার হাত বাড়িয়ে বসলে এরপর মোদির নির্বাচনে জেতার বয়ানের কী হবে?
অতএব ইতোমধ্যে মোদি উল্টা রাস্তা ধরেছেন। তিনি নিজ কাশ্মিরের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন; তা প্রকাশিত হয়ে গেছে। তিনি পরিষ্কার করেই কাশ্মিরি রাজনীতিবিদদের সাথে একটা বৈঠক করে ফেলেছেন। কাশ্মির আবার রাজ্য স্ট্যাটাস ফেরত পেতে পারে মানে সারকথায় তিনি হয়তো আর কঠোর দমননীতি নয়, আবার নির্বাচনী জানালা খুলতে চাচ্ছেন যদি পোষায়, এমন ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছেন!
কিন্তু মূলকথা, ভারত আফগানিস্তান থেকে নিজেকে একেবারেই প্রত্যাহার করে নিলেই কি ভারতের কাশ্মির মোদির নিয়ন্ত্রণে থাকবে? সোজা জবাব হলো, এর ন্যূনতম নিশ্চয়তাটুকুও নেই। হিন্দুত্ববাদের এমনই মহিমা। ভারতের কাছে এখন শুধু বাইডেনের আমেরিকাই নয়, ক্রমেই খোদ হিন্দুত্ববাদই এক লায়াবিলিটি হয়ে উঠতে চাইছে যেন।
অতএব আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারতের জন্য কোনো অবস্থানই আশাপ্রদ নয়। সে কারণে সম্ভবত আফগান অ্যাকাডেমিক মোরাদিয়ান এভাবে বলেছেন। ভারতের জন্য ন্যূনতম নিশ্চয়তাও কোথাও নেই। আবার ইরানের সাথে ভারতের সম্পর্কও খুবই খারাপ মাত্রায়। ইরানকে চরম অপমানজনক অবস্থায় ফেলার পরে আমেরিকার কথা শোনা ভারত আর সম্পর্ক রাখতে চায়নি, ছুড়ে ফেলেছে।
আজ এখন ভারতেরই মুখ নেই যে, ইরানের সাথে আবার কথা বলে আফগান ইস্যুতে কিছু পরামর্শ নেয় অথবা ওই অঞ্চলে ভারতের কোথাও পা দেয়ার জায়গা অন্তত ফেরত পায়। মনে হচ্ছে, কূটনৈতিক সব ইস্যুতে মোদির এখন সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে হাজির হবে এত দিনের হিন্দুত্ববাদী পদক্ষেপগুলো!
ওদিকে আমেরিকা এখনো আশা করে আছে যে, অন্তত গোপন ঘাঁটি বা গোপন তৎপরতা চালানোর মতো জায়গা ইমরানের পাকিস্তান আমেরিকাকে দেবে!
সত্যি দুনিয়া বড়ই অদ্ভুত জায়গা! কখন যে কার দিন আসে। সে কারণেই সম্ভবত দুঃখের দিনের পরে সবাই বলে ওঠে- হামারা দিন ভি আয়েগা!
সব জুলুম বে-ইনসাফের বিচারের দিন হয়ে যায় যেন সেটি!
#লেখকঃ রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
দৈনিক নয়া দিগন্ত।
২৮.০৬.২১

Comments

Popular posts from this blog

What are Supply and Demand Zones and How to Trade with Them

এগুলো খান, ভালো ঘুমান

Sea Fish in ctg