দেশের বিখ্যাত এক শিল্পগ্রুপের মালিক তিনি

 দেশের বিখ্যাত এক শিল্পগ্রুপের মালিক তিনি । জীবনে বহু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পোড় খাওয়া লোক । মানুষ চেনেন, মানুষকে পড়তে পারেন ভালভাবেই । না হলে কি আর এত বড় প্রতিষ্ঠান তৈরী করতে পারেন !

.
কাজের সূত্রে পরিচয় প্রায় এক দশক আগে । বিশাল শিল্পপতি হলেও ভদ্রলোক খুব অমায়িক আর নিরহংকারী । মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হলে আমার মত অতি সামান্য একজনকেও পাঁচ-দশ মিনিট সময় দেন, কথা-বার্তা বলেন । তাঁর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাই বিদেশী - ভারত, শ্রীলংকা, হংকং, তাইওয়ান, মিশর ইত্যাদি নানা দেশ থেকে আসা । কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম তাঁর আরেকটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে - সেও ভারতীয় । তার কয়েকদিন পরেই এক অনুষ্ঠানে উনার সাথে দেখা । কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে একটু অনুযোগের স্বরেই বললাম -
.
“স্যার, আমার একটা অভিযোগ আছে ।”
“বলেন, বলেন, কি অভিযোগ ?” তিনি বললেন ।
“আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে এত এত বিদেশী নিয়োগ দেন কেন ? দেশের লোকেরা কি দোষ করল ?”
ভদ্রলোক প্রথমে হেসে উঠলেন । তারপর বললেন কফি নিয়ে ঐ কোণায় চলুন, তারপর বলছি ।
কফির কাপ নিয়ে এক কর্ণারে এসে দাঁড়ালাম । তিনিও লোকজনের ভীড় থেকে বের হয়ে কফি হাতে চলে এলেন ।
.
“আমার প্রতিষ্ঠানের এই ব্যবসার শুরুটা একজন শ্রীলংকানের হাতে করা ।” তিনি বলতে শুরু করলেন তার নতুন ভারতীয়-নিয়োগ-দেয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির গল্প ।
.
“আমার টাকা ছিল, এরকম কিছুর হালকা একটা কনসেপ্ট ছিল, কিন্তু কিভাবে করা যায়, সেটির ধারণা ছিল না । কি করা যায় ভাবছিলাম । এই সময়ে খোঁজ পেলাম সেই শ্রীলংকান ভদ্রলোকের । তাঁর সাথে কথা বলে পুরো ব্যপারটিতে তাঁর অসামান্য দখল আর জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হলাম । তাঁকেই দায়িত্ব দিলাম এটি দাঁড়া করাবার । তিনি কি চমৎকারভাবে শূন্য থেকে এটিকে শক্তভাবে দাঁড়া করেছিলেন তা আপনারা সবাই জানেন ।
.
৪ বছর পর ভদ্রলোক দেশে ফিরে যাবেন গোঁ ধরলেন । আমিও ভাবলাম প্রতিষ্ঠান যখন দাঁড়িয়েই গেছে, এবার একজন দেশীয় লোক দিয়ে চালাই । নিলাম একজনকে, মার্কেটে যার সুনাম কম নেই, প্যাকেজ ঐ শ্রীলংকানের চাইতে বেশী দিয়েই । তিনি এসে দেড় বছরেই আমার প্রতিষ্ঠানের নাভিশ্বাস তুলে দিলেন ! মুখে যে যত কথাই বলুক তাঁর আসল দৌড় বুঝে গেলাম । টাকা-পয়সা দিয়ে তাঁকে রিলিজ করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম ।
.
ভাবলাম, একবার ভুল হতেই পারে । আরেকবার চেষ্টা করে দেখা যাক । আরেকজন এদেশীয় নিয়োগ দিলাম । এবারে আরও বেশী টাকা দিয়ে, তাঁর সুনামের কথা ভেবেই ।
.
তিনি ২ বছরে এমন অবস্থা করলেন যে আমার সেই প্রতিষ্ঠান বেচে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে দেবার মত অবস্থা ! যে ব্যবসা আমার ছিল ক্যাশ-কাউ, সেটি হয়ে গেল বিরাট লস-মেকার ! তাড়াতাড়ি উনাকে সেপারেশনের জন্য বিরাট কম্পেসেশন দিয়ে বিদায় করলাম ।
.
বাধ্য হয়ে আবার ফিরে গেলাম দেশের বাইরে লোক খুঁজতে । এবার ভারত থেকে নিয়ে আসলাম একজনকে । প্যাকেজ লাস্ট দেশীয় ভদ্রলোকের চাইতেও কম । তিনি এসে ৩ বছর ছিলেন । আমার প্রায় ভেঙ্গে পড়া ব্যবসাকে আবার দাঁড়া করিয়ে, সাজিয়ে-গুছিয়ে দিয়েছেন । সেটি আপনারাও টের পাচ্ছেন । কিছুদিন আগে তিনি যখন চলে গেলেন আমি অনেক ভেবেছি দেশের কাউকে দায়িত্বটা দিব কি না ? আগের দুইবারের অভিজ্ঞতা থেকে সাহস বা ভরসা কোনটাই পাইনি । তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে আনতে হয়েছে, আবার ।
.
এবার বলেন কেন আমি আমার ব্যবসাকে রিস্কে ফেলে দেশীয় মানুষ নিয়োগ দেব ? আমি ব্যবসা করতে এসেছি, তার জন্য পৃথিবীর যেখান থেকে উপযুক্ত লোক পাব, যে আমার ব্যবসাকে চালাতে পারবে, তাকেই আমি নেব । এত এত টাকা দেবার পরেও যদি আমি এদেশে সঠিক মানুষ না পেয়ে বাইরে থেকে লোক আনি, তার জন্য আমাকে আপনি দোষ দিতে পারেন কি ?”
.
আসলেই, তাঁকে দোষ দিতে পারি কি ?
.
আমার অবজার্ভেশন বলে আগামি ৫-১৫ বছরে বাংলাদেশের বিজনেস সেক্টরে সবচেয়ে অভাব হবে যে ব্যপারটির সেটি কিন্তু উদ্যোক্তা নয়, আইডিয়া নয় এমনকি টাকাও নয় । সেটি হলো মেধার, মেধাবী মানুষের বা যাকে বলে হিউম্যান রিসোর্সের ।
.
নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন ভেবে যে দেশে শ'খানেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে হিউম্যান রিসোর্সের অভাব হয় কিভাবে ?
.
উত্তর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা শেখাচ্ছে তা কি আদৌ এখনকার এবং আসছে দশকের ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে লাগবে ? যুগের প্রয়োজন মেটাতে পারব ?
.
খুব স্বল্প সংখ্যক কোর্স-ইউনিভার্সিটি-শিক্ষক বাদে আমরা গঁৎ বাধা বিবিএ-এমবিতে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ১০-১৫ বছর আগের স্লাইড দেখে পড়ি, তত্ত্ব কথাও শিখি কিন্তু যুগের সাথে মিল রেখে হাতে-কলমে কিছু শিখি না । গন্ডায় গন্ডায় এ্যাসাইনমেন্ট-প্রোজেক্ট রিপোর্ট জমা দেই কিন্তু কিভাবে আসলে বিজনেস কেস বানাতে হয় শিখি না । কয়েক ডজন প্রেজেন্টেশন দেই, কিন্তু ইন্টারভিয়্যুতে ঠিক মত কথা মত বলতে পারি না, প্রেজেন্টেশন তো দূরের কথা !
.
আমরা তত্ত্ব শিখি, তার ব্যবহার শিখি না, তাকে রিলেট করা শিখি না, প্রয়োগ করে সমস্যা সমাধান করাটা শিখি না । বন্ধু-বড় ভাইদের কাছ থেকে এ্যাসাইনমেন্ট কপি করতে শিখি, নিজে কিভাবে সত্যিকারের সার্ভে করে, ডাটা অ্যানালাইসিস করে একটা কেস দাঁড়া করানো যায় সেটি শিখি না । আমরা প্রেজেন্টেশনের দিনে কিভাবে স্যুটেট-বুটেড হয়ে, শাড়ি পড়ে এসে ছবি তুলতে হয় সেটি শিখি কিন্তু প্রেজেন্টেশনের আসল টেকনিকগুলো শিখি না, প্রশ্ন করা কিংবা প্রশ্নের উত্তর দেয়াও শিখি না । আমরা মুখস্ত করতে শিখি, কিন্তু চিন্তা করতে শিখি না ।
.
তারউপর আছে লোকাল কেস স্ট্যাডির অভাব । নর্থ-আমেরিকান বইয়ে দেয়া Walmart-এর কেস পড়ে কি হবে যদি আমি 'স্বপ্ন'-র কেস না জানি ? M&M-এর ডিস্ট্রিবিউশন মডেল জেনে কি হবে যদি আমি 'প্রাণ'-এর ডিস্ট্রিবিউশন মডেল না জানি ? Nokia’র ব্যর্থতার কারণ জেনে কি হবে যদি আমি 'ইকোনো বলপেন' বা 'মিমি চকলেট' কি কারণে হারিয়ে গেল সেটি না জানি ? আমেরিকার ‘Got Milk’ ক্যাম্পেইনের আদ্যপান্ত জেনে কি হবে যদি আমি 'এ্যারোমেটিক হালাল সাবান' কিংবা 'রাঁধুনী'র ক্যাম্পেইনের ব্যপারে না জানি ? ইন্টারনেট কোম্পানী AOL কিভাবে পুরো আমেরিকায় সার্ভিস দেয় সেটি জেনে কি হবে যদি Link3 কিভাবে সারা বাংলাদেশের এতগুলো জেলায় সার্ভিস দিচ্ছে সেটি না জানি ?
.
Marketing বলি বা Business......সবসমই যে জায়গায় হয়, সেখানকার পরিস্থিতি, সেখানকার প্রসেস-সিস্টেম-কলা কৌশল, সেখানকার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে হয় । মার্কেটিং-এর theory গুলো সারা পৃথিবীতে এক হতে পারে কিন্তু এর প্রয়োগ সবসময়ই ভীষণভাবে স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে করতে হয় । সেটি না করতে জানলে CGPA 4.00 হয়েও লাভ নেই ।
.
প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কখনই চমৎকার আধুনিক কিছু ছিল না, তাহলে আরও আগে এই সংকট হয়নি কেন ?
.
সেটির কারণও আছে । আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সবসময়ই মুখস্তবিদ্যা আর তত্ত্বকেন্দ্রীক ছিল, তারপরও হিউম্যান রিসোর্সের এই সংকটটা আগে এভাবে আসেনি কারণ ‘আগেকার সময়টা বিশ্বায়নের যুগ ছিল না ।’
.
একটা উধাহরণ দেই ।
ধরুন আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে এদেশে ফেস ক্রীম ছিল মূলত দুটি - 'তিব্বত' আর 'কিউট' । খুঁজলে দেখবেন এই দুটোরই ব্র্যান্ড ম্যানেজার বা বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে যাঁরা ছিলেন তারা এদেশেরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া । তাঁদের পড়াশোনার ধরণ-ধারণ, শিক্ষা সবই একই ধাঁচের । সুতরাং, কম্পিটশনে তাঁদের দুজনের যোগ্যতাই একই মাপের, একই মানের । বাজারে যেহেতু আর তেমন কেউ নেই সুতরাং তাঁদের প্রতিযোগীতা হচ্ছিলো একের সাথে অপরেরই ।
.
কিন্তু এই সুখের সময় বেশীদিন রইল না । আস্তে আস্তে বিশ্বব্যবস্থা বদলাতে শুরু করল, বাংলাদেশও প্রবেশ করল উন্মুক্ত অর্থনীতির যুগে । বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান আর ব্র্যান্ডগুলো এদেশের বাজারে আসা শুরু করল । প্রতিযোগীতাটা আর 'তিব্বত বনাম কিউট'-এর ভেতর রইল না । প্রতিযোগী হিসেবে দৌড়ে নাম লেখালো ব্রিটেনের ইউনিলিভার, জার্মানির Nivea, আমেরিকার P&G, ফ্রান্সের L'Oréal... ...এরকম সব বাঘা বাঘা জায়েন্টরা ! মেধা, কৌশল আর এফিসিয়েন্সির প্রতিযোগীতাটা আর কিন্তু ঐ দুই দেশীয় কোম্পানীর ব্র্যান্ড ম্যানেজারের ভেতর রইল না । বরং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বের হয়েও তাঁদের পড়তে হলো বৈশ্বিক প্রতিযোগীতায় । তাঁদের লড়াইটা শুরু হলো অক্সফোর্ড, মিউনিখ-হেইডেলবার্গ-বন, Kellogg-বোস্টন-হার্ভাড, INSEAD-HEC প্যারিস থেকে বের হয়ে আসা গ্রাজুয়েটদের সাথে । মেধার পার্থক্যটা আর শিক্ষাব্যবস্থার বিশাল ফাঁকটা ধরা পরা শুরু করল ঠিক তখনই ! আর দেশীয় ব্যবসায় মেধার সংকটটাও শুরু হলো তখন থেকেই।
.
ডেনমার্কে দেখেছি আমাদের আরলার গরুর ফার্মগুলোতে গরুর খাবার থেকে শুরু করে যত্নআত্তি সব কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের ছেলেমেয়ে আর শিক্ষকগণ । ফার্মে নতুন মেশিন-টেকনলজি লাগবে, খবর দাও ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে । নতুন আবহাওয়া আর স্পেসের ক্যালকুলেশন লাগবে, খবর দাও স্টাটিস্টিক ডিপার্টমেন্টকে । দুধের কোয়ালিটি নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে, খবর দাও বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টকে । নতুন প্রোডাক্ট বানাবার জন্য গবেষণা লাগবে, ডেকে আনো ফুড-সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের ছেলেমেয়েদেরকে । এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে নামার আগে পড়াশোনা করার সময়ই ওখানকার ছেলেমেয়েরা একেকজন কত বাস্তবজ্ঞান নিয়ে ফেলে ! এর ফলে এরা যখন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়, একেকজন যেন একেকটা ছোটখাট বাঘ !
.
আরলা’তে ‘Future 15’ বলে একটা কনসেপ্ট আছে, সংক্ষেপে আমরা বলি ‘F15’ । সারা পৃথিবী থেকে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের মধ্য থেকে প্রতিযোগীতার মাধ্যমে প্রতিবছর মাত্র ১৫ জনকে বেছে নেয়া হয়, যাদেরকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ফাংশনে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করানোর মাধ্যমে গড়ে তোলা হয় আরলা‘র ভবিষ্যৎ লিডার (Future Leader) হিসেবে । গেল ৫ বছরে এরকম ৫ জন F15 আমার সাথে কাজ করেছে - সুইডিস, ডাচ, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড আর ব্রিটেনের ছেলেমেয়ে । প্রত্যেকে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্রেস গ্রাজুয়েট হয়ে এসেছে ৬ মাসও হয় নি । অথচ, কি তীক্ষ্ন একেকজন ! কি পরিষ্কার কনসেপ্ট, কি প্র্যাকটিক্যাল ধারণা, পরিশ্রমী আর ডেডিকেটেড ! ১৬ বছর পাড়ি দিয়ে আসার পরও ওদের সাথে মিটিং এ বসলে মাঝে মাঝে আমারও খাবি খেতে হয় ! মাঝে মাঝে ভাবি কবে আমাদের গ্রাজুয়েটরা এরকম একেকটা বাঘ হয়ে উঠবে ! তবে দোষ আমাদের ছেলেমেয়েদের না । দোষ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার যা নোট মুখস্থ, অ্যাসাইনমেন্ট কপি আর CGPA-এর পেছনে দৌড় শেখায়, কিন্তু লজিক্যাল ডিডাকশন, প্র্যাকটিক্যাল কাজ, ইন-ডেপথ চিন্তা করা শেখায় না । ফাঁকি দিয়ে নম্বর পেতে শেখায় কিন্তু সত্যিকারের ডেডিকেশন নিয়ে কাজ করতে শেখায় না ।
.
বলতে পারেন সবাই একরকম নয় । আমিও বলি অবশ্যই সবাই একরকম নয় । এই বিধ্বংসী শিক্ষাব্যবস্থার ফাঁক গলে যে কজন প্রচন্ড মেধা আর নিজেদের চেষ্টায় নিজেদেরকে তৈরী করে নেয় তাঁদের অধ্যাবসায় আর প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তিকে সালাম না জানিয়ে পারা যায় না । কিন্তু সেই সংখ্যা খুবই কম । সেই সামান্য কজন যথেষ্ট ছিল যখন এদেশের ব্যবসা ক্ষেত্র খুব ছোট্ট ছিল, ছিল হাতে গোণা কয়েকটি মাত্র কোম্পানী, ব্যাংক, সাপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি । কিন্তু এখনকার সময়ে যখন বাংলাদেশের ব্যবসাক্ষেত্র তর তর করে বাড়ছে, ছড়িয়ে পড়ছে, প্রতিযোগীতায় নামছে আন্তর্জাতিক সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে, তখন এই সংখ্যা মোটেও যথেষ্ট নয় । ফলাফল হিসেবে আমরা এখন ভাল হিউম্যান রিসোর্সের এই তীব্র সংকট দেখছি ।
.
একটা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর পেছনেই কিন্তু থাকে মানুষের মেধা, আন্তরিকতা আর পরিশ্রম । সমস্যা হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মেধানির্ভর নয়, স্মৃতিশক্তি নির্ভর । আমাদের সমাজব্যবস্থা আন্তরিকতা না শিখিয়ে ফাঁকি দেয়া শেখায় । আমাদের মানসিকতা পরিশ্রম না করে শর্টকাটে আগানোতে বেশী আগ্রহী । এই শিক্ষা আর মানসিকতা নিয়ে আর যাই হোক বৈশ্বিক লেভেলে প্রতিযোগীতায় নামা যায় না ।
.
ফলাফল যুদ্ধের মাঠে আমরা সহজেই পরাজিত হই । হওয়াটাই স্বাভাবিক ।
.
এই সংকটের আরেকটি কারণ হচ্ছে ‘BCS প্রীতি' । কিছুদিন আগে দেশের বিখ্যাত এবং অন্যতম পুরানো এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম । ডিপার্টমেন্ট চেয়ারম্যান অত্যন্ত দু:খের সাথে বললেন “ছেলেমেয়েরা পড়ার বই আর পড়ে না । ফার্স্ট ইয়ার থেকেই শুরু করে বিসিএস পড়া । এদের টেবিলে পড়ার বই থাকে না, থাকে শুধু বিসিএস গাইড ।” বিসিএস দিয়ে সরকারী চাকরীর প্রতি এই যে অন্ধ মোহ, তার কারণে গ্রাজুয়েটদের একটা বিরাট অংশের একাডেমিক পড়াশোনায় বিরাট ফাঁক রয়ে যাচ্ছে । বিসিএস কেন এত মোহময় ? চাকরীর নিশ্চয়তার জন্য তো, যেটি প্রাইভেট চাকরীতে কম ? আমি বলব সম্পূর্ণ ভুল ধারণা । আপনার পারফর্মেন্স যদি ভাল হয়, আপনি যদি Business Objective ডেলিভারী করেন, তবে যে কোন প্রাইভেট কোম্পানী আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে । আপনি সেখানকার রাজা । In fact, আপনি শুধু সেই কোম্পানীর রাজাই থাকবেন না, বরং অসংখ্য কোম্পানী আপনাকে নিতে প্রতিযোগীতায় নামবে । সৎ পথে আপনি অবিশ্বাস্য অংকের টাকা ইনকাম করতে পারবেন, সাথে সম্মান আর দেশের উন্নতিতে অবদান রাখার সুযোগ । তারপরও দেখি বিসিএসের মোহে ছেলেমেয়েরা আসল পড়াশোনা আর জ্ঞান নেয়াটা ভুলে যায় । বিসিএস গাইডে আটকে থেকে নিজেদের সাবজেক্টে তেমন কিছু না দেনেই কোনোরকমে এরা গ্রাজুয়েট হয়ে আসে । তারপর যদি বিসিএসে চান্স না পায়, তখন না থাকে এপার, না থাকে ওপার ! চাকরীর বাজারে এরা সবচেয়ে অপাংতেয় ! এমনকি আমার পরিচিত এক ফার্স্টবয়কে বিসিএসে চান্স না পেয়ে আত্নহত্যাও করতে দেখেছি ! মেধার কি চরম অপব্যয় !
.
সংকটের শেষ কারণটি হচ্ছে ‘মাইগ্রেশন’ । মাইগ্রেশনের দিক থেকে বাংলাদেশের কেসখানা খুবই অদ্ভুত ! যুদ্ধ কিংবা দুর্ভিক্ষ না ঘটলে সারা পৃথিবীতে সাধারণত: মাইগ্রেট করে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ, অর্থাৎ যারা দেশে ভাল আয়ের ব্যবস্থা করতে পারে না, তাঁরা ভিন্ন দেশে গিয়ে ভাগ্য ফেরাবার চেষ্টা করে । কিন্তু বাংলাদেশে ঘটে উল্টো - এদেশের মাইগ্রেশনের হার উচ্চবিত্তদের ভেতর সবচেয়ে বেশী । এদেশে মাইগ্রেট করে সবচেয়ে ভাল মেধাবীগণ । আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় গেল ১০ বছরে যতজন প্রফেশনাল লোককে অস্ট্রেলিয়া বা কানাডা’র মাইগ্রেট করতে দেখেছি, তাঁরা প্রত্যেকে প্রচন্ড চৌকস ছিলেন । এরা একেকজন একেকটা ডিপার্টমেন্টের কিংবা ব্যবসার খোল-নলচে বদলে ফেলার মত যোগ্যতা রাখতেন, কিন্তু আফসোস ! আস্তে আস্তে সবাইই চলে গেলেন এবং যাচ্ছেন । একটা ছোট্ট ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান দেই । প্রায় ১২ বছর আগে সালে আমি মনে মনে ৬ জন তরুন মার্কেটিয়ার কে টার্গেট করেছিলাম যে এঁরা ক্যারিয়ারে দারুণ ভাল করবেন । সেই ৬ জন উঠছিলেনও ঝড়ের মত, দারুণ সুনাম নিয়ে । কাজ করছিলেন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ভাল ভাল পদে ! কিন্তু দু:খের সাথে খেয়াল করলাম প্রচন্ড সম্ভাবনাময় এই ৬ জনের ভেতর ৫ জনই ইতিমধ্যে মাইগ্রেশন নিয়ে চলে গেলেন ! আর একজন মাত্র বাকি আছেন । ভাবেসাবে বুঝছি তিনিও চলে যাবেন !
.
দিনে দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতি যত উন্নতি হবে, বৈশ্বিকভাবে দেশ যত এগিয়ে যাবে, মেধার এই সংকট আরও তত বাড়বে ।
.
তাহলে এই যে দেশে ১০০ টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন তৈরী হচ্ছে, চীন-জাপান-ইউরোপ থেকে এত এত বিনিয়োগ আসছে, সেগুলোতে কাজ করবেন কারা ? কারা চালাবেন এত এত প্রতিষ্ঠান ? উপযুক্ত লোক কই ? Digital Bangladesh বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি । এই নতুন বাংলাদেশের ব্যবসাক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবার মত চৌকস মেধা কই ? দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যে তর তর করে বড় হচ্ছে, বিশ্ব বাজারে ঢুকছে তাঁদের হয়ে বিশ্ববাজারে যুদ্ধটা করবে কারা ?
.
ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুরোধ পাই লোক খুঁজে দেবার জন্য । ফেসবুকে আর লিংডইনে কানেকশনের অভাব নেই, কিন্তু রেফার করতে গেলে ১০ টা নাম খুঁজে পাই না, যাদেরকে কনফিডেন্টের সাথে রেফার করা যায় ! অন্তত: কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জানি যাঁরা কয়েকলাখ টাকা আর গাড়ির অফার নিয়ে প্রায় ২ বছর বসে থেকে তারপর মিড-লেভেলে লোক খুঁজে পেয়েছে, কেউ কেউ এখনও পায়ই নি । আর টপ-লেভেলের কথা নাই বা বললাম ! নিদারুণ হাহাকার যাকে বলে !
.
ফলাফল হিসেবে দেশীয় উদ্দ্যোক্তাগণ হাত বাড়াচ্ছেন বাইরের দিকে । লোক আনছেন ভারত, শ্রীলংকা, চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, হংকং, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া এমনকি রাশিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়ার মত দূর দুরান্ত থেকে । অন্যদিকে আমাদের দেশের লাখ লাখ গ্রাজুয়েট মাত্র ২০ হাজার টাকার একটা চাকরী পাবার জন্য হাহাকার করে মরছে !
.
হয়ত বলবেন দেশের লোককে কাজ দেয়া উনাদের দেশপ্রেমের দায়িত্বের ভেতর পরে ।
.
আমি বলব “মোটেও নয় ।”
.
উনারা উদ্দ্যোক্তা । আমলাতন্ত্রের জটিলতা, অবকাঠামগত সীমাবদ্ধতা, দূর্নীতি, পলিসিগত শুণ্যতা... ... ... এত সব কিছু পায়ে ঠেলে উনারা যখন উনাদের টাকা-মেধা-সময় এদেশে বিনিয়োগ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখনই দেশপ্রেমের যথেষ্ঠ প্রকাশ এবং প্রমাণ উনারা দিয়ে ফেলেছেন । বিশ্বায়নের এযুগে যে কোনো উদ্দ্যোক্তা তাঁর মেধা-অর্থ-সময় পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বিনিয়োগ করার স্বাধীনতা এবং অধিকার রাখেন । তারপরও অন্য কোথাও না গিয়ে তিনি বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন তাঁর বিনিয়োগের জন্য ! তাঁর কাছে আমরা আর কত দেশপ্রেম চাই !?! তাঁকে ঠিকঠাক মত হিউম্যান রিসোর্স যোগান দেয়াটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব ছিল, সেটি যদি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত না করতে পারে তবে বিদেশী লোককে বেছে নেবার জন্য উদ্দ্যোক্তাকে মোটেই দোষ দেয়া যায় না । তাঁর ব্যবসা নিশ্চয়ই তিনি দেশপ্রেম দেখাবার জন্য লাটে উঠাবেন না । দেশপ্রেম দেখিয়ে দেশী কিন্তু অযোগ্য লোককে কাজে নিয়োগ করে ব্যবসার বারোটা বাজালে দেশের কোনো উপকারও নিশ্চয়ই হবে না, উল্টো বরং ক্ষতিই হবে ।
.
হ্যা, প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ট্রেইনিং দেয়া, তাঁদেরকে আরও চৌকস করে নেয়া প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের ভেতর নিশ্চয়ই পরে । কিন্তু তার আগে তাঁকে নুন্যতম যোগ্যতা সম্পন্ন লোক তো পেতে হবে, যাকে ট্রেইনিং দিয়ে আরও ভালমত তৈরী করে নেয়া যায় । সেটি না পেলে তিনি নিশ্চয়ই শুণ্য থেকে শিখিয়ে-পড়িয়ে নেবেননা । মনে রাখতে হবে উদ্দ্যোক্তা এখানে ব্যবসা করতে এসেছেন, স্কুল খুলতে নয় । আরেকজন প্রতিষ্ঠানের মালিক কথায় কথায় আমাকে একদিন বলেছিলেন - “আমি ৫ পেলে তাঁকে ৮ কিংবা ১০ বানাতে ইনভেস্ট করতে পারি, কিন্তু ০ বা ১ পেলে তাঁকে কিভাবে ৮-১০ বানাবো ? কেনই বা বানাবো ?”
.
তাই যা বলছিলাম । আমার পর্যবেক্ষণ বলে ভাল জনবল তৈরী না হওয়া এবং ভালদের মাইগ্রেট করে চলে যাওয়া এই দুই সমস্যা মিলিয়ে সামনের এক যুগে বাংলাদেশের ব্যবসা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিবে ভাল মানের চৌকস হিউম্যান রিসোর্সের অভাব ! ফলাফল হিসেবে দুটো বিষয় ঘটবে -
.
১) দেশীয় উদ্দ্যোগ মার খাবে - উদ্দ্যোক্তাগণ ক্ষতির মুখে পরবেন । সাথে ব্যাংকিংখাত এবং সামগ্রীক অর্থনীতি ।
২) উদ্দ্যোক্তাগণ দিনে দিনে আরও বেশী বিদেশী কর্মীবাহিনীর উপর নির্ভর করা শুরু করবেন । এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আমাদের দেশের মিড থেকে টপ লেয়ার পর্যন্ত বিদেশী লোকে ভেসে যাবে । অর্থাৎ, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির সুফলের একটা বড় অংশই নিয়ে যাবেন বিদেশী কর্মীগণ । কি আফসোস !
.
এর সমাধান কি ?
.
আমি কোনো শিক্ষাবিদ নই । পলিসি মেকারও নই । আমি সামান্য একজন চাকরীজীবি মাত্র । তাই “শিক্ষাব্যবস্থা বদলাতে হবে” এই সব গালভরা বুলি দেব না । দিয়েও কোনো লাভ নেই । শিক্ষাব্যবস্থা বদলাবার এই কথা গেল কয়েকযুগ ধরে বহু বড় বড় শিক্ষাবিদগণ বলে এসেছেন, তাতে লাভ হয়নি মোটেও । দিনশেষে রয়ে গিয়েছে সেই খাড়া-বড়ি-থোর, থোর-বড়ি-খাড়াই ।
.
আমার মতামতটা ভিন্ন । শিক্ষাব্যবস্থার উপর নির্ভর করে না থেকে নিজের শিক্ষার ভারটা নিজের হাতে নিন । বিশেষ:ত যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন কোর্সের বাইরে পড়া শুরু করুন, জানা শুরু করুন । বই ছাড়াও জানার আরও অনেক সোর্স এখন আছে - Youtube, কেস ম্যাটারিয়াল, Documentary, Podcast......দেখুন, শুনুন, পড়ুন, পড়ুন এবং পড়ুন । CGPA 3.9 নিয়ে গর্ব করা বাদ দিন, কারণ আপনার প্রতিযোগীতা আপনার ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সাথে নয়, বরং হার্ভার্ড-অক্সফোর্ড বিজনেস স্কুল থেকে পড়ে আসা লোকদের সাথে । CGPA যাই থাকুক কাজ করতে গিয়ে আমেরিকা-ইউরোপ-ভারত-চীন-সাউথ ইস্ট এশিয়ার ঐ সব বাঘা বাঘা ছেলেমেয়েদের সাথে লড়াই করতে পারবেন তো ? না পারলে আপনার আকাশচুম্বী CGPA আর ফাইলভর্তি সার্টিফিকেটের কাগজ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কোনো লাভ নেই । প্রতিষ্ঠান বেতন দেয় কর্মীর কাজকে, তাঁর একাডেমিক রেকর্ডকে নয় । আপনার যাবতীয় রেজাল্ট আর CGPA’র কাজ আপনাকে প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ করে ইন্টারভিয়্যুতে ডাক এনে দেয়া । ইন্টারভিয়্যুর দরজা দিয়ে ঢোকা মাত্র আপনার নিজস্ব সত্যিকারের জ্ঞান, চিন্তাশক্তি, Attitude, Communication Skills, Professionalism, Dedications আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করবে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত CGPA নিয়ে এসেছেন তা তখন গৌণ মাত্র । তিতা শোনালেও এটাই বাস্তব সত্যি কথা ।
.
যারা প্রফেশনাল লাইফের শুরুর দিকে আছেন, তাঁরা দয়া করে নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখুন । আপনি যদি দু-বছর আগেও পড়াশোনা শেষ করে প্রফেশনাল ফিল্ডে এসে থাকেন, তার মানে আপনি যা যা পড়াশোনা করে বিশাল রেজাল্ট নিয়ে এসেছেন, তা ইতিমধ্যেই দু-বছর পুরোনো হয়ে গিয়েছে । এই দু'বছরে পৃথিবী বদলে গিয়েছে অনেক খানিই । আপনি যদি সেই বদলটুকু নিজের ভেতর না নিতে পারেন, তবে আপনি ইতিমধ্যেই পিছিয়ে পরেছেন দু'বছর ।
.
একটা উদাহরন হিসেবে বলি - আমি নর্থ-সাউথ থেকে গ্রাজুয়েশন করে বের হই ২০০৪ সালে । তখন ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টগ্রাম কিছুই ছিল না, আর ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটাই তো তখনও তৈরীই হয়নি । অথচ, এখন আমার মার্কেটিং প্ল্যানের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে এই বিষয়গুলো ! প্রতিদিন আমাকে এগুলো ব্যবহার করতে হয় । আমি যদি নিজেকে সময়ের সাথে আপডেট না করতে পারতাম, তবে আমি ইতিমধ্যেই মার্কেটিং-এর যুদ্ধের মাঠের বাইরে ছিটকে যেতাম । প্রতিটি প্রফেশনাল ব্যক্তিকে এটা মনে রাখা জরুরী যে মেধা-কেন্দ্রীক যুদ্ধের এই মাঠে প্রতিনিয়ত নিজের অস্ত্রকে অর্থাৎ নিজের মেধা-জ্ঞানকে ধারালো রাখতে হবে, না হলে জেতার কোনো বিকল্প নেই ।
.
এখন অনেক ধরণের ট্রেইনিং হয়, প্রফেশনাল কোর্স হয় । সেগুলোতে অংশ নিন - না, সেলফি তোলার জন্য নয়, সত্যিকারে কিছু শেখার জন্য । সোসাল মিডিয়ার এ যুগে প্রফেশনালদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান । কিন্তু তাঁদের সাথে শুধু চাকরীর অনুরোধ না করে বরং দরকার হলে ভলান্টারি হিসেবে কোনো সত্যিকারের প্রজেক্টে কাজ করুন । যা শিখবেন তা চাকরীর চাইতেও বেশী কাজে দেবে । অনলাইনে অনেক চমৎকার চমৎকার কোর্স আছে, Module আছে, সেগুলো পড়ুন, অংশ নিন । ৩০ হাজার টাকা দিয়ে লেটেস্ট মডেলের মোবাইল না কিনে টাকাটা বরং ট্রেইনিং, কোর্স আর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য খরচ করুন । একসময় প্রতি বছর ১ লাখ টাকার মোবাইল কিনতে পারবেন । বন্ধুদের সাথে হ্যাং-আউটে গিয়ে ২০০০ টাকা খরচ না করে, ১০০০ টাকা খরচ করে ভাল ভাল সেমিনারে যান । দেখবেন কাজে লাগবে, কিছু নতুন শিখতে পারবেন, না হলেও দু-জন নতুন কানেকশন বাড়বে । এর মূল্য কিন্তু কম নয় !
.
মেধা আর উপযুক্ত লোকের এই সংকটের অন্য একটি দিক হচ্ছে মেধাবী আর যোগ্যদের জন্য অবারিত সুযোগ ! ভেবে দেখুন Booming economy’র এই দেশে যদি উপযুক্ত লোকের সংকট থাকে এবং বাড়ে, তবে যে কয়জন লোক যোগ্য আছেন বা হবেন, তাঁদের চাহিদা কি পরিমানের বেশী হবে ! সোনার ডিমের পাড়া হাঁসের মত সেই লোকগুলোকে নিয়ে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান কি পরিমাণ কাড়াকাড়ি করবে ! আপনি যদি সেরকম একজন হতে পারেন, তবে প্রফেশনাল জীবনে আর কি চাই আপনার ? সুতরাং, এই সংকট কিন্তু আপনার জন্য এক দারুণ সুযোগও বটে, যদি আপনি নিজেকে তৈরী করতে পারেন ।
.
আমাদের এ্যাকাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর ভরসা করে বা তাকে দোষ দিলে আপনার লাভের লাভ কিচ্ছুই হবে না । দিনশেষে আপনার জীবনের, আপনার ক্যারিয়ারের যুদ্ধটা আপনাকে একাই করতে হবে । মেধার সংকটের এই দেশে আপনি এই দারুণ সুযোগটা হেলায় হারাবেন না কি নিজেকে প্রস্তুত করে দু-হাতে এই সংকটের লাভ তুলে নেবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার । পৃথিবী আপনার জন্য থেমে থাকবে না, কখনও কারও জন্য থাকেও নি । হয় আপনি, না হয় অন্য কেউ - প্রতিষ্ঠান তার প্রয়োজন অনুযায়ী লোক ঠিকই বেছে নেবে, দেশ-ধর্ম-অঞ্চল-ভাষা কোনোটাই তাকে আটকাতে পারবে না । সেই লোকটা কি আপনি হবেন, না কি অন্য কেউ তা একান্তই আপনার যোগ্যতা । আর কারও নয় ।
কৃতজ্ঞতা: Galib Bin Mohammad

Comments

Popular posts from this blog

What are Supply and Demand Zones and How to Trade with Them

এগুলো খান, ভালো ঘুমান

Sea Fish in ctg